Ad Code

Responsive Advertisement

** মোহিনী একাদশী মাহাত্ম্য**

                                                        💓 ** মোহিনী একাদশী মাহাত্ম্য**💓

 


কুর্মপুরানে বৈশাখ শুক্লপক্ষের ‘মোহিনী’ একাদশীর ব্রত মাহাত্ম বর্ণনা করা হয়েছে ।

    মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন- ‘হ জনার্দন।বৈশাখ শুক্লপক্ষীয় একাদশীর কি নাম, কি ফল, কি বিধি- এসকল কথা আমার নিকট বর্ণনা করুন।’

উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে ধর্মপুত্র ! আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করেছেন পূর্বে শ্রীরামচন্দ্রও বশিষ্ঠের কাছে এই একই প্রশ্ন করেছিলেন।

    তিনি জিজ্ঞাসা ক করেছিলেন হে- মুনিবর! আমি জনকনন্দিনী সীতার বিরহজনীত কারনে বহু দুঃখ পাচ্ছি। তাই একটি উত্তম ব্রতের কথা আমাকে বলুন। যার দ্বারা সর্বপাপ ক্ষয় সর্বদুঃখ বিনষ্ট হয়।

    এই কথা শুনে বশিষ্ঠদেব বললেন- হে রামচন্দ্র! তুমি উত্তম প্রশ্ন করছ। যদিও তোমার নামগ্রহনেই মানুষ পবিত্র হয়ে থাকে। তবুও লোকের মঙ্গলের জন্য তোমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও পরম পবিত্র একটি ব্রতের কথা বলছি।

    বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষীয় একাদশী ‘মোহিনী নামে প্রসিদ্ব। এই ব্রত প্রভাবে মানুষের সকল পাপ, দুঃখ ও মোহজাল অচিরেই বিনষ্ট হয়। তাই মানুষের উচিত সকল পাপক্ষয়কারী ও সর্বদুঃখ বিনাশী এই একাদশী ব্রত পালন করা। একাগ্রচিত্তে তার মহিমা তুমি শ্রবণ কর। এই কথা শ্রবণমাত্রই সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়।

    পবিত্র সরস্বতী নদীর তীরে ভদ্রাবতী নামে এক সুশোভনা নগরী ছিল। চন্দ্রবংশজাত ধৃতিমান নামে এক রাজা সেখানে রাজত্ব করতেন। সেই নগরীতেই ধনপাল নামে এক বৈশ্য বাস করতেন। তিনি ছিলেন পুণ্যকর্মা ও সমৃদ্বশ্বালীব্যাকিক্ত। তিনি নলকূপ, জলাশয়, উদ্যান, মঠ ও গৃহ ইত্যাদি নির্মান করে দিতেন। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্তি পরায়ন ও শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সুমনা, দ্যুতিমান, মেধাবী, সুকৃতি ওধৃষ্টবুদ্ধি নামে তার পাঁচজন পুত্র ছিল। পঞ্চম পুত্র ধৃষ্টবুদ্ধি ছিল অতি দুরাচারী, সে সর্বদা পাপ কর্মে লিপ্ত থাকত। পরস্ত্রী সঙ্গী লম্পট ও দ্যুতক্রীড়া প্রভৃতি পাপে সে অত্যন্ত আসক্ত ছিল। দেবতা, ব্রম্মন ও পিতামাতার সেবায় তার একেবারেই মতি ছিল না। সে অণ্যায়কর্মে রত, দুষ্টস্বভাব ও পিতৃধন ক্ষয়কারক ছিল। সবসময সে অভক্ষ ভ্কষণ ও সুরাপানে মত্ত থাকতো। পিতা ধনপাল একদিন পথ চলিছিলেন হঠাৎ তিনি দেকতে পেলেন ধৃষ্টবুদ্ধি এক বেশ্যার গলায় হাত রেখে নিঃসকোচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার নির্লজ্য পুত্রকে এভাবে চৌরাস্তায় ভ্রমন করতে দেখে তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। এই কুস্মভাব দর্শনে ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি তাকে গৃহ থেকে বার করে দিলেন। তার আত্মীয়-স্বজনও তাকে পরিত্যাগ করল। সে তখন নিজের অলংকারাদি বিক্রি করে জীবন অতিবাহিত করতে লাগল। কিছুদিন এইভাবে চলার পর অর্থাভাবে দেখা দিল। ধনহীন দেখ বেশ্যাগনও তাকে পরিত্যাগকরল।

    অন্নবস্ত্রহীন ধৃষ্টবুদ্ধি ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়ল। অবশেষে নিজের গ্রামে সে চুরি করতে শুরু করল। একদিন রাজার প্রহরীরা তাকে বন্ধী করল। কিন্তু পিতার সম্মানার্থে তাকে মুক্ত করে দিল। এভাবে বারকয়েক সে ধরা পড়লও ছাড়া পেল। কিন্তু তবুও সে চুরি করা বন্ধ করাল না। তখন রাজা তাকে কারাগারে বন্ধ করে রাখরেন।বিচারে সে কষাঘাত দন্ডভোগ করল। কারাভোগের পর অনন্য উপায় ধৃষ্ঠবুদ্ধি বনে চলে গেলো। সেখানে সে পশুপাখি ধরে তাদের মাংস ভক্ষন করে অতি দুঃখে পাপময় জীবন যাপন করতে লাগল।

    দুস্কর্মের ফলে কেউ কখনও সুখী হতে পারে না। তাই সেই ধৃষ্টবুদ্ধি দিবারাত্রি দুঃখশোকে জর্জরিত হল। এভাবে অনেকদিন অতিবাহিত হলো। কোনো পুণ্যফলে সহসা একদিন সে কৌন্তিণ্য ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হল। বৈশাখ মাসে ঋষিবর গঙ্গাস্নান করে আশ্রমের দিকে প্রত্যাবর্তন করিছিলেন- শোকাকুল ধৃষ্টবুদ্ধি তার সম্মুখে উপস্থিত হল। ঘটনাক্রমে ঋষিরা বস্ত্র হতে একবিন্দু জল তার গায়ে পড়ল। সেই জলস্পর্শ তার সমস্ত পাপ দূর হল। হঠাৎ তার শুভবুদ্ধির উদয় হল।

   ঋষির সামনে সে কৃতঞ্জলিপুটে প্রার্থনা করতে লাগল ‘হ ঋষিশ্রেষ্ঠ। সে পুণ্য প্রভাবে আমি এই ভষিণ দুঃখযন্ত্রনা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারি তা কৃপাকরে আমাকে বলুন। ঋষিবর বললেন- ‘বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে মোহিনী নামে যে প্রসিদ্ধ একাদশ আছে, তুমি সেই ব্রত পালন কর। এই ব্রতের ফলে মানুষের বহু জন্মার্জিত পর্বত পরিমান পাপরাশি ক্ষয় হয়ে থাকে।

    মহামুনি বশিষ্ঠ বললেন- কৌন্তিণ্য ঋষির উপদেশ শ্রবণ করে প্রসন্ন চিত্তে ধৃষ্টবুদ্ধি সেই ব্রত পালন করল। হে মহারাজ রামচন্দ্র- এই ব্রত পালনে সে পাপমুক্ত হল। দিব্যদেহ লাভ করল। অবশেষে গরুড়ে আরোহন করে সকল প্রকার উপদ্রবহীন বৈকুন্ঠধানে গমন করল। হে রাজন, ত্রিলোকে মোহিনী ব্রত থেকে আর শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই। যজ্ঞ তীর্থস্হান, দান ইত্যাদি কোন পুণ্যকর্মই এই ব্রতের সমাান নয়। এই ব্রত কথার শ্রবন কীর্তনে সহস্র গোদানের পূন্য ফল লাভ হয়।



                                         💓   হরে কৃষ্ণ 💓

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Please do not share any links

Close Menu